ডিজিটাল মার্কেটিং বনাম প্রচলিত মার্কেটিং: কোনটা ভালো?

বর্তমান ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার যুগে মার্কেটিং একটি ব্যবসার প্রাণ। পণ্য বা সেবা যত ভালোই হোক না কেন, যদি সেটি সঠিক গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে না পারে তবে ব্যবসায় সফলতা আসবে না। এজন্য যুগ যুগ ধরে মার্কেটিং বা প্রচারণার ওপর নির্ভর করতে হয়েছে।

মার্কেটিং মূলত দুই ধরনের – প্রচলিত মার্কেটিং (Traditional Marketing) এবং ডিজিটাল মার্কেটিং (Digital Marketing)। এখন প্রশ্ন হলো, কোনটা ভালো? কোনটা আপনার ব্যবসার জন্য বেশি কার্যকর? আসুন বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

প্রচলিত মার্কেটিং কী?

প্রচলিত মার্কেটিং হলো সেই সব প্রচারণা পদ্ধতি যা বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যেমন:

  • টিভি বিজ্ঞাপন
  • রেডিও বিজ্ঞাপন
  • সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনে বিজ্ঞাপন
  • বিলবোর্ড
  • পোস্টার, লিফলেট
  • সরাসরি বিক্রয় (Door to Door Marketing)

এগুলো মূলত অফলাইন মাধ্যম, যেখানে গ্রাহকের কাছে বার্তা পৌঁছানো হয় সাধারণ যোগাযোগ চ্যানেলের মাধ্যমে।

ডিজিটাল মার্কেটিং কী?

ডিজিটাল মার্কেটিং হলো অনলাইনে করা মার্কেটিং কার্যক্রম। যেমন:

  • ফেসবুক বিজ্ঞাপন
  • গুগল অ্যাডস
  • ইমেইল মার্কেটিং
  • ইউটিউব ভিডিও মার্কেটিং
  • ওয়েবসাইট/ব্লগ SEO
  • ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, লিঙ্কডইন মার্কেটিং

এখানে ব্যবসায়িক প্রচারণা হয় ইন্টারনেট ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে।

প্রচলিত মার্কেটিংয়ের সুবিধা

  1. বৃহৎ পরিসরে ব্র্যান্ড বিল্ডিং – টিভি, রেডিও বা বিলবোর্ড বিজ্ঞাপন অনেক বড় পরিসরে ব্র্যান্ডকে জনপ্রিয় করে তুলতে পারে।
  2. বিশ্বাসযোগ্যতা – প্রচলিত মিডিয়া এখনো অনেক মানুষের কাছে বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।
  3. অফলাইন গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো – গ্রামীণ বা কম ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছাতে প্রচলিত মার্কেটিং কার্যকর।

প্রচলিত মার্কেটিংয়ের সীমাবদ্ধতা

  • খরচ অনেক বেশি (টিভি বিজ্ঞাপন, বিলবোর্ড ইত্যাদি)
  • ফলাফল মাপা কঠিন (কতজন বিজ্ঞাপন দেখে কিনল সেটা জানা যায় না)
  • টার্গেট গ্রাহক নির্দিষ্ট করা কঠিন
  • সময়সাপেক্ষ

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সুবিধা

  1. কম খরচে বেশি প্রচারণা – তুলনামূলকভাবে খরচ কম, এমনকি ছোট ব্যবসায়ীরাও সহজে করতে পারে।
  2. টার্গেটেড গ্রাহক নির্বাচন – বয়স, লোকেশন, আগ্রহ অনুযায়ী নির্দিষ্ট গ্রাহকের কাছে বিজ্ঞাপন দেখানো যায়।
  3. ফলাফল মাপা সহজ – গুগল অ্যানালিটিক্স, ফেসবুক ইনসাইটস ইত্যাদির মাধ্যমে কতজন বিজ্ঞাপন দেখেছে, ক্লিক করেছে, কিনেছে সব জানা যায়।
  4. দ্রুত ফলাফল – কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিজ্ঞাপন সারা দেশে ছড়িয়ে যায়।
  5. গ্রাহকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ – কমেন্ট, মেসেঞ্জার বা ইমেইলের মাধ্যমে গ্রাহকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব।

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সীমাবদ্ধতা

  • ইন্টারনেট নির্ভরতা বেশি
  • প্রতিযোগিতা তীব্র (অনেকে একই ধরনের বিজ্ঞাপন চালায়)
  • ভুলভাবে বিজ্ঞাপন চালালে বাজেট নষ্ট হতে পারে

তুলনামূলক বিশ্লেষণ

বিষয়প্রচলিত মার্কেটিংডিজিটাল মার্কেটিং
খরচবেশিতুলনামূলকভাবে কম
টার্গেট গ্রাহকনির্দিষ্ট করা কঠিনখুব সহজে নির্দিষ্ট করা যায়
ফলাফল মাপাপ্রায় অসম্ভবঅ্যানালিটিক্সে সহজেই জানা যায়
গতিসময়সাপেক্ষদ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়
যোগাযোগএকমুখী (One-way)দুইমুখী (গ্রাহক-ব্যবসা)

কোনটা ভালো?

প্রচলিত মার্কেটিং এবং ডিজিটাল মার্কেটিং দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সময় ও প্রয়োজন অনুযায়ী এর ব্যবহার নির্ভর করে।

👉 বড় ব্র্যান্ড যারা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করে, তারা সাধারণত দুই ধরনের মার্কেটিং একসাথে করে (Integrated Marketing)।
👉 ছোট ও মাঝারি ব্যবসার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক বেশি কার্যকর, কারণ কম খরচে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়।

আজকের যুগে অনলাইন গ্রাহকের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাই ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ডিজিটাল মার্কেটিং অপরিহার্য। তবে ব্র্যান্ড বিল্ডিং বা দীর্ঘমেয়াদি ইমেজ তৈরির জন্য প্রচলিত মার্কেটিংও কাজে লাগে।

আরও পড়ুনঃ

ডিজিটাল মার্কেটিং বনাম প্রচলিত মার্কেটিং: কোনটা ভালো?